একটা বই তো আনতে পারতি!

(১)
শুরু থেকেই শুরু করি-
আমার ভর্তি পরীক্ষা ছিল ২৯-০৫-১৮ সকাল ৮ টায়। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য মোটামুটি ২ ঘন্টা আগেই পৌঁছে যাই মতিঝিলের এই কলেজ গেটে! সবসময় যা হয়, গিয়ে দেখি একদল সহযাত্রী এখনও বই হাতে নিয়ে তুখোর পড়া পড়েই যাচ্ছে! আম্মু কিছুটা চিন্তিত গলায় বললেন-একটা বই তো আনতে পারতি! আমি খানিকটা অভয় দেই আম্মুকে। পরিবেশটা থেকে বেশ মজা বা রস পাচ্ছিলাম! যার কারনে মানসিক অবস্থার আরো উন্নতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে বেশ ভালোই লাগছিল! এরমধ্যেই পরিচিত এক চশমাওয়ালার (Shafin)মুখের দেখা পেয়ে আরো ভালো লাগে!
সময়মতো কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়! আমি ঠিক প্লান করে ওয়েটিংরুমে ঐ চশমাওয়ালার পাশেই বসি! পরে সেখানেই ওর সাথে পরিচয়!মানসিক অবস্থার আরো বেশ উন্নতি নিয়ে পরীক্ষার হলে উপস্থিত হই! আমার পরীক্ষা ছিল ৩১২ নম্বর রুমে! বেশ আনন্দের সাথেই এক ঘন্টার পরীক্ষা, ১০-১২ মিনিট আগে শেষ করে শান্তির নিশ্বাস নিচ্ছিলাম! আমাদের সময় পরীক্ষা ও ভাইবা একইদিনে ছিল! আমার ভাইবা ছিল ১৫৬ নম্বর রুমে মোটামুটি ২৫-৩০ জনের মধ্যে সবার শেষে ছিল আমার ভাইভা! ভাইভার আগে বেশখানিকটা সময় পেলাম মজা করার!তখন রমজান মাস ছিল তাই কয়েকজন টুপি পাঞ্জাবি পরেই পরীক্ষা দিতে আসে! অনেকের সাথে বেশ ভালোই আলাপ জমে ওঠে; অনেকটা হাসাহাসি কাণ্ড। স্যারদের হেল্প করার জন্য রুমে যে বড় ভাই ছিলেন সে কয়েকবার আমাদের হাসতে নিষেধ করে! কিছুটা দমে যাই! অবশেষে আমার সময় এল!
বেশ সুন্দর ভাবে রুমে ঢুকে সালাম দিয়ে অনুমতি নিয়ে বেঞ্চে বসলাম(স্যাররাও সামনে অন্য বেঞ্চে বসা ছিলেন)! তখনও হাসি মুখের কোন কমতি ছিল না রীতিমতো স্যাররা বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করলেন!সুন্দরই জবাব দিলাম হাসিমুখে! অবশেষে জিজ্ঞেস করল কিছু সাধারণ জ্ঞান -তারও উত্তর দিলাম বেশ হাসিমুখে। তবে সবগুলার উত্তর ছিল একই -স্যার জানা নাই; স্যার জানা নাই; স্যার জানা নাই! সম্ভবত আমার ভাইবা নিয়েছিলেন সোলায়মান স্যার(ফিজিক্স) আর বাসার স্যার(বায়োলজি)!
প্রশ্নের উত্তর না পেরে তারপরও বেশ হাসিমুখে বেরিয়ে এলাম কলেজ থেকে! রাস্তায় এক চাচা জিজ্ঞেস করলেন -বাবা তোমাকে কি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করছে? আমি বলার পর বলল -এগুলা তো আমার ছেলে সবই পারে! কালকেই ওরে সব পড়াইছি! তুমি পারছ? বললাম - না পারি নাই! আম্মু রীতিমতো সংকিত হয়ে বললেন- টেনশন করিস না! অনেকেই পারে নাই!
এরপর বাসায় এসে যখন জানলাম আমার বেশ কয়েকজন বন্ধুই ভালো ভাইবা দিছে তখন কিছুটা বিষন্নতা নিয়ে কয়েকটা দিন কাটিয়ে দিলাম! ০৪-০৬-১৮ সময়টা সকাল ১০-১১ টা হবে কলেজের সিনিয়র Himel ভাই(শুরু থেকে এখনও পাশে আছেন ভাই) ম্যাসেজ দিয়ে জানালেন- আরে চান্স তো হয়ে গেছে! রোল চেক করো!
এই একটা কথা শোনার পরই চোখ থেকে কিছু অতি দূর্লভ রহস্যময় জলের ফোঁটা ঝড়ে পড়ল!
পরের দিন ০৫-০৬-১৮ তারিখেই ভর্তি হয়ে গেলাম,শুরু হলো নটরডেমিয়ান জীবন! ২৯-০৬-১৮ তারিখে নবীন বরণের পর নতুন একটা শক্তি নিয়ে শুরু হয় পরবর্তী পর্ব!

মাহমুদ আকন